হিমেল এখন মানুষ ভালোবাসে - গল্প
বলছিল দশ বা ততোধিক বার প্রেমে ব্যর্থ হওয়া ছেলেটি।
-ও তাই বুঝি?! কোনো হতাশা নেই?
-না, নেই।
দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিল ছেলেটি।
-আচ্ছা তুই যে শ'খানেক বার মেয়েদের মন জয়ে ব্যর্থ হলি। প্রেম করতে পারলি না একজনের সাথেও, তবুও বলবি তুই সফল!
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বসা ছোট্ট জমায়েত। কথা সত্য, ভার্সিটিতে এসেও প্রেম না করতে পারাটাতো হতাশাই!
-বন্ধু, একটা কথা বলি। আমি প্রেমে পড়েছি বহুবার ঠিকই, কিন্তু কখনোই ওপরওয়ালার কাছে এটা কামনা করি নি যে, মালিক! তুমি আমাকে এই মেয়েটার মন জয়ের ক্ষমতা দাও। আমি যেন এই মেয়েটাকেই আমার জীবনে পাই! বরং চেয়েছি আমার জন্য সবচেয়ে ভালো যে হয় তাকেই আমার করো!
আচ্ছা, একটা মেয়ে কি কারোর জীবনের সব চাওয়া-পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে? হতে পারে সকল সম্পরকের পরিপুরক?
হ্যা, গুনিজনের মতো কথা শুনে সবাই হাসলো ঠিকই, কিন্তু মন থেকে আসেনি বোধ হয় অনেকের। জমায়েতের এক বন্ধু হিমেলের মাথায় কথাটা ঘুরতে থাকে।
আজ প্রেমিকাকে ফোন দেয়ার আগেই হঠাৎ মায়ের কথা মনে হলো। একে একে ভাই, বোন, কাজিনদের কথাও মনে হতে থাকলো। যাদের সময় করে ফোন দেয়া হয়নি এক সপ্তাহে। কাউকে আবার এক পক্ষ-মাস পেরিয়ে বছরে!
মাথা ধরে গেল তার। ৫ মিনিট হয়ে গেছে জানুকে কল দেয়নি। রাগ করবে জানু, কৈফিয়ত দিতে হবে। এই ভেবে রেস্টুরেন্টের পথে হাটলো সারপ্রাইজ গিফট নিতে। পথিমধ্যে এক ফকির পথে তার হাত ধরলো, খাওয়ার জন্য পাঁচটি টাকা চেয়ে। কোনোরকমে হাত ছাড়িয়ে আবার চলতে থাকলো। কি মনে করে পেছনে ফিরে দেখে তার অভাগা ব্যর্থ প্রেমিক বন্ধুটি আসছে। হাতে কেক ছিল খেতে খেতে আসছিল, সে খুশি হচ্ছিল যে ফকিরটা এবার ব্ন্ধুকে ধরবে। হলোও তাই।
হিমেল লক্ষ করছে পুরো ব্যপারটা।
-আমার কাছে তো ভাড়ার বাড়তি টাকা নেই। তা আপনি কেক খান...
বলে কেকটি বাড়িয়ে দিল ফকিরের দিকে। কেন জানি এই অর্ধেক কেকেই ফকির খুশি হয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বন্ধু একটা সরল হাসি দিয়ে পথ চলতে থাকলো।
তার মনে পরে প্রেমিকার বার্থডেতে কোকোমায়া থেকে আনা তিন পাউন্ডের কেকটার কথা।
- আমার বাবু সোনাটা, তুমি "জানুর বার্থডে" লেখাটা পিঙ্ক কালারের করলা না কেনো!
হিমেলের কেনো জানি একটা ঘাপলা লাগছিল। শালার ব্যাটা বলে কি না ভালোবাসার কেউ নাই তার? পুরো দুনিয়া থেকেই ভালোবাসা পাবার ক্ষমতা থাকার পরও! ভালোবাসার নতুন মানে খুজে পায় হিমেল। অনেক ভেবেচিন্তে সে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হল। ভালোবাসা, ভালোলাগা, আনন্দানুভুতিগুলো এখন তার কাছে জোইবিক চাহিদা কেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে অন্য আবেগ অনুভূতিগুলো যেন ডানা ঝাঁপ্টাচ্ছিল মুক্তি পাওয়ার আশায়। এখন সে সপ্তাহে একদিন হলেও ওই ফকিরের সাথে বসে কিছু খায়। হ্যাঁ, তার আগে তার কাজিন্দের খোঁজ নিতে ভুলে না।
আর তার বাবু সোনার কি হলো? প্রপোজ এনিভার্সারির এক মাস পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে আনা কেকের কালারটা লাইট পিঙ্ক ছিল কিন্তু বাবু চেয়েছিল ডিপ পিঙ্ক, তাই ব্রেকাপ।
হুম, তাহলে বাকি দিনগুলো কি করে হিমেল? পরিবার পরিজন আর তাছারা শত শত কোটি লোকের দুনিয়ায় ভালোবাসার লোকের অভাব আছে নাকি! মেয়েটাকে ভুলে হিমেল এখন মানুষ ভালোবাসে ।☺
#Shaon_070
কোন মন্তব্য নেই
Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!