Header Ads

Bodrul-Islam-bodrul-070-bodrul070-bodrul-070-tutorial

চাপ্টার শেষ - গল্প

চাপ্টার শেষ
"কায়া দেখলে মায়া বাড়ে" একটা কথা আছে না! এটা খুব সত্য। আমি জীবনে বহুবার এর বাস্তব প্রতিফলনদেখেছি। উল্টা কদাচিৎ ঘটেছে। যেখানে কায়া দেখে মায়া কমেছে! সেটা শেষে বলবো।

 

বেড়াতে গেলে আত্মীয়দের ব্যাবহারের কথাই ধরুন না। খাবার টেবিলে বসলাম,

-এই বাবুর প্লেটে আরেক টুকরা গোস্ত দে। ছেলেটারে দেখে মনে হচ্ছে কতদিন খায় না!


ভাইরে ভাই, যত জায়গায় যাই একই কথা শুনতে হয়। মজার ব্যাপার হলো খালার বাসা হোক বা ফুফুর বাসায়, তিন-চারদিন থাকলেই আমার বৈশাখের নদীর মতো শুকনা গালে মাংস হয়। উভ-অবতল লেন্সের মতো গালদুটো উভ-উত্তল হয়!

উভ-অবতল লেন্সের মতো গালদুটো উভ-উত্তল হয়!


মুখশ্রী নাই, তবুও বাবা-মায়ের ভালো নামের কারনে দাদা-নানা দুই পক্ষের আত্মীয়দেরই ভালো কদর পাই। কদর পেয়ে পেয়ে এমন এক অবস্থা কিছু না পেলেই মনে হয় আমার প্রাপ্যটা পেলাম না। এই যেমন একটা আইফোন এক্স বায়না ধরেছিলাম ফুফুর কাছে। দেয় নি। খুব মন খারাপ হয়েছিল।

নব্বই হাজার টাকা, তিন মাসের বেতন-ই তো লাগতো ফুফুর! তাও দিলো না!

দুনয়াটাকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল সেদিন। যাইহোক বড় হয়ে গেছি এখন। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে চাকরি খুজতেছি। সেইসাথে টিউশনি করাচ্ছি।

টিউশনিতে বেশ কদর পাই আমি। আমি, সাথে আমার ওহমের মতো দেখতে মাথা আর বিখ্যাত উভ-অবতল গাল দুটো নিয়ে টিউশনিতে যাই আমি।

আমার ওহমের মতো দেখতে মাথা


অন্য টিচাররা ৪০-৪৫ মিনিট পড়িয়ে চলে যাই আমি দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় দিই। রেজাল্টও ভালো করে। তাতে আমার স্টুডেন্টের গার্ডিয়ান খুব খুশি আমার উপর। বাস্তবতা হলো স্টুডেন্ট আমার কথা এক ফুটাও শুনে না, কিন্তু রিকোয়েস্ট করেছে বেশি সময় যেন থাকি। কেন?

আমার ফোন নিয়ে পাবজি খেলে বেয়াদবগুলো। রেজাল্ট ভালো কিভাবে হয় তারপরও? এক হলে একজন প্রশ্নোত্তর পারলে সবাই পেরে যাই। কলি যুগের পোলাপান। অনেক চালাক স্টুডেন্ট এরা।

যাইহোক, চাকরি না পেলেও বয়স অনেক হয়ে যাচ্ছিল। বিয়ের আলাপ সালাপ চলছিল বাসায়। একদিন কথা প্রসংগে এক স্টুডেন্টের কাজিনের কথা উঠে আমার বিয়ের জন্য। আমার মা শুভ কাজে বিলম্ব পছন্দ করেন না।

তাই তিনি স্টুডেন্টের বাসায় ডাকলেন ওই মেয়েকে। মেয়ে মাশাল্লাহ। মায়েরও পছন্দ হয়েছে। মেয়ের মাকেও দেখে নারাজ মনে হলো না।

আমাকে মেয়ের সাথে আলাদা কথা বলতে দিলো। আমি একাধারে স্পষ্টভাষী এবং কম কথার মানুষ। বাড়তি কথা বললাম না, কিন্তু যতটুকু দরকার তা বলেছি। দশ মিনিট কিভাবে কাটলো বুঝলাম না।


যাইহোক,বের হয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। পথে রিক্সায় মা জিজ্ঞেস করলো

-কিরে বাবু, কি কথা হলো?

-মা, তুমি তো জানো আমি দরকারের বেশি কথা বলি না

-তা কি বললি শুনি?

-রুমে ঢুকে দেখি মেয়ে বসে আছে। তারপর আমিও দাড়িয়ে ছিলাম। ৫ মিনিট বেশ বিরক্ত লাগছিল। তারপর বললাম, "বসি?" তারপর মেয়ে বললো, "জ্বি বসেন।"

-এটুকুই?

-কি যে বলো মা, এটুকুই কথা হবে কেন? আমি কি মফিজ নাকি! তারপর আরো ৫ মিনিট পর মেয়ে বললো, "আচ্ছা, কথা তো বললেন-ই না! এবার তাহলে উঠি। " আমি বললাম,"জ্বি" তারপর বের হয়ে আসলাম!

বলেই মায়ের দিকে তাকালাম। দেখি মায়ের কপালে হাত। বিড়বিড় করে কি যেন বলছিল। যাইহোক কয়েকদিন কেটে গেলো। কোন সাড়াশব্দ নাই কোন পক্ষ থেকেই। মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগছিল কাকে জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম। আমার ওহমের মতো মাথায় হাজার ওয়াটের বুদ্ধি খেললো। আমার স্টুডেন্টকেই তো জিজ্ঞেস করতে পারি!

ব্যাস, ক্লাসের ফাঁকে ফোরের ছাত্রী লিমা কে বললাম

-সীমা আপুর কি খবর?

-খুব ভালো আছে। কিন্তু কেন?

-না মানে এমনি।

-ওহ বুঝেছি বুঝেছি। আপনাকে একটা গোপন খবর দিতে পারি।

-কি খবর?

-আপনার সাথেই বিয়ের আলাপ চলছে না?


পিচ্চি এতো পাকনা! আমি হলে স্যারদের সাথে গড়গড় করে সব বলতাম, যা জিজ্ঞেস। প্রশ্ন করা তো আমার কল্পনাতীত! 


-জানো কিছু তুমি?

-আমি জানি কিন্তু বলবোনা!


মহাবিপদ! হাতেপায়ে ধরবো নাকি ভাবলাম। নাহ, কেমন দেখায়।


-তুমি যা জানো বলো, আরো আধাঘন্টা পাবজি খেলতে দিবো।

-আগে পাবজি খেলবো তারপর বলবো।

এদিকে আমার তর সইতেছে না। অগত্যা রাজি হয়ে গেলাম। এদিকে পিচ্চির মা নাস্তা নিয়ে এসে বললো 

-বাবা আজকে ৩ ঘন্টা পড়িয়েছ। তুমি না থাকলে যে কি হতো আমার মেয়েটার!

-আন্টি আজকে আরো আধাঘন্টা পড়াবো। নতুন একটা চাপ্টার ধরেছি তো।

-আচ্ছা বাবা, ইউটিউব দেখে মুড়ির কালোজাম বানিয়ে নিয়ে আসতেছি। তুমি পড়াও বাবা।


আধাঘন্টা হয়ে গেলো। ৫ মিনিট বোনাস দিলাম। তারপর কানে কানে বললাম

-এই লিমা, কি বলেছে?

-সরাসরি বলে নি। আমি শুনে নিয়েছি।

-সাবাশ। কি শুনেছ বলো।

-সীমা আপুর মা আমার আম্মুর সাথে সেদিন আলাপ করছিল আপনার ব্যাপারে। সীমা আপুর পছন্দ হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করেছিল।

-তারপর তারপর? কি বলেছে?

-সীমা আপু বলেছে, "সবই মেনে নিচ্ছিলাম। ওই ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বলতে পারলাম না। হাবুলের মতো থাকে, কি একটা আতশি কাঁচের মতো চশমা। আর মাথাভর্তি তেল! এখনো কেউ অমন কলুর মতো তেল দেয় মাথায়?


শুনে আমার উভ-অবতল মুখখানা পাঁচের মতো হয়ে গেলো। ওদিকে আন্টি আবার নাস্তা নিয়ে এসেছে।

-বাবা চাপ্টার শেষ হয়েছে?

আমি খুব হতাশ। মন টা খারাপ। জবাব তো দিতেই হবে।

-জ্বি আন্টি ওই চাপ্টার শেষ।

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস আন্টির আনা মুড়ির কালোজামগুলোকে এক ঝটকায় ঠান্ডা করে দিলো।


৬ঃ৩৪ PM

25/11/2020

কোন মন্তব্য নেই

Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!

© Anari Production 2020. merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.