Header Ads

Bodrul-Islam-bodrul-070-bodrul070-bodrul-070-tutorial

নব্য অতীতের নস্টালজিয়া - খোলা ডায়েরী


ক্লাসে ঢুকলাম তিন জন অপরাধীর মতোই। মাথা নিচু করে। একটা লেখা ছিল খুব সম্ভবত শামসুর রাহমানের, “প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে ”। আর আমাদের অবস্থা ছিল প্রথম রিপিট ক্লাস দুই সপ্তাহ লেটে !
তিন জনের মধ্যে ছিলাম আমি, রিতিকা আর শাবাব ভাই। বরাবরই আমরা ব্যাকব্যাঞ্ছার তবে এবারের কারণ ভিন্ন ছিল। জুনিয়রদের ক্লাসে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথির মতো ছিলাম। অনেক দিন পর আমার কার্যকরী ক্লাস ছিল এটা।
কেমন কেমন ভাবেই মাঝে মাঝে তাকাচ্ছিল ছেলে-মেয়ে গুলো। আচ্ছা, ওরা কি সবাই জানতো কোর্স রিপিট মানে কি? আমরা লেভেল থ্রি থেকে ইয়ার ড্রপ খেয়ে লেভেল টুতে আছি এখন, এটা জানতো তারা? অথবা আমরা কার্যত লেভেল টুতে থাকলেও আমাদের বন্ধুরা সব লেভেল থ্রির এটা জানা আছে কি তাদের?
কাগজে কলমে লেভেল টু এবং ফেইলড স্টুডেন্ট হলেও সেকেন্ড মোস্ট সিনিওর লেভেল অভ দা ফ্যাকাল্টি লেভেল থ্রি এর হেডাম ধরেই বসে থাকলাম সবাই। ওদিকে শাবাব ভাই পলিটিকেল পার্সন, রিতিকা ভাল আবৃত্তি করে আর আমি এ.ই.টি. ফেস্ট ২০১৯ এ একটা বিশেষ সেগমেন্ট করেছিলাম এজন্য হয়তো জুনিয়রদের পরিচয় দেয়ার লাইন ধরে গেল।
গোটা দশ জনের পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর বুঝলাম আমার পরিচয় নিয়ে মোটামুটি দুই-এক জনের একটু জানায় ঘাটতি ছিল আর বাকি কজনের কেউই চিনতে পারে নি আমাকে! 
আমার পুরনো ক্লাস সঙ্গীদের মনে পরছিল। ইয়ার ড্রপ জেনে বুঝে নিলেও এই একটা কারনেই শুধু কেদেছিলাম বোধ হয়। তাদের সাথে আর ক্লাস করা হবে না। অবশ্য তাতে কি? সবাই এক ফ্যাকাল্টিতেই তো থাকবো, বি.এস.সি. ইন এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে অনেকেই এখানে মাস্টার্স করবে। মন খারাপ করার দৃশ্যত কোন কারণ ছিল না। কিন্তু কথায় আছে না, “চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল ! ”
এদিকে ক্লাস শুরু হয়। লেভেল ওয়ান এবং টুয়ে আমার জন্য ভয়ানক কোর্স হয়ে থাকা গণিত ক্লাস। অবশ্য জয়ন্ত স্যার আমাদের অনেকটা অভয় দিয়েছেন। ক্লাসের আগে যখন আমরা রিপিট ক্লাসের আদেশ নামা নিয়ে স্যারের কাছে গেলাম তখন এতো ভাল ব্যবহার করলেন যে সেটা দেখলে যে কারোর ড্রপ খেতে ইচ্ছা না হলেও কোর্স রিপিট নিতে ইচ্ছা করবে। ভাল ব্যবহার এইজন্যই বলতে হল কেননা ড্রপ তো বহুদূর ক্যারি খেলে বা সাধারণভাবে কোর্স রিপিট নিয়ে অন্য স্যারদের সাথে (সবাই না, কেও কেও) দেখা করতে গেলে তারা আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনযাপনের ধরণকে তাঁর অথবা তাঁর চেয়ে একটু কম পরিশ্রম করা মনীষীদের সাথে তুলনা করে বুঝিয়ে দেন যে এ জীবন ছাত্রদের না। আমাদের আরেকবার ভাবা উচিত পড়াশোনা করে বাবার টাকা নষ্ট করবো কিনা। এমনকি আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি করতে দ্বিধা করেন না, যেখানে আমাদের তিন স্তরের ছাকনী পেরিয়ে ভর্তি হতে হয় ! কথা বেশি বেশি বলে ফেলছি। যা বলছিলাম, জয়ন্ত স্যার শুধু দিকনির্দেশনাই দিলেন না আমাদের নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা এবং আমাদের কাছে রীতিমত তিনি সহায়তা চাইলেন যেন আমাদের ফল এইবার ভাল হয় !
ক্লাস চলছে। অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বড় ভাই রূপি ককুন থেকে বেড়িয়ে একটু ক্লাসের ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাকালাম। নতুন অতীত সেই ২০১৭ সালের ক্লাসের কথা মনে পড়ে গেল। একটা ছেলে দেখতে কবিরের মতো আবার একটা মেয়ে দেখতে রিতুর মতো। কিছু হাত তোলা ছেলেও ছিল আরো ছিল আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে শান্তশিষ্ট এবং জিনিয়াস মিম্মির মতো দেখতেও একটা মেয়ে ! আমার চোখটা যেন কাঁদতে চাইছিল। কেন যেন। কি ছিল সে দিনগুলোতে? কখনো ভেবেছিলাম আমরা বড় হবো? তারপর আবার এখানে ক্লাস করবো? কবির, রিতু, মিম্মিরা আমাদের সাথে থাকবেনা কিন্তু তাদের ছেড়ে দেয়া জায়গায় অন্যরা থাকবে, দেখতে শুনতে তাদের মতোই? ক্লাসের সময় না কাদলেও এই লেখাটা লেখার সময় আমার কাঁদতেই হলো। আমার পুরনো বন্ধুরা জানে কি না বা বুঝে কি না জানি না, তাদের প্রতি টান টা কেন যেন একটু বেশিই অনুভব করতাম। সবার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু বান্ধবীদের গল্প করতাম। সিনিয়র ভাইয়েরা নানাভাবেই বলতো এত বন্ধু থাকবে না, এই সব মোহ কাটতে সময় লাগে না। কথা গুলো মিথ্যা করার জন্যই বোধ হয় তাদের সাথে আবেগটা একটু বেশিই জড়িয়ে গিয়েছিল।
জুনিয়রদের নিজেদের মধ্যে করা খুনসুটি অন্যদিকে কারোর আবার স্যারের সাথে মজা করা, পুরো ক্লাস হাসানো দেখে অবশ্য আমি হাসলাম মাথা নিচু রেখেই। ক্লাস হাসানোর ব্যাপারটা দর্শকদের কাছে এমন দেখাতো? এ যেন অদ্ভুত এক নস্টালজিয়ার জগত, আয়না ছাড়াই নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা। অতঃপর নিজে নিজে হাসা।
পুরনো বন্ধুদের খুব বেশি আবেগে জড়িয়ে যাওয়ায় এদিকে আমার এলাকার আর স্কুলের বন্ধুদের সাথে একটা দূরত্ব এসে যাচ্ছিল। বুঝি নি। পেপারের লেখা, তারকা ব্যাক্তিত্বের ইন্টারভিও দেখে ব্যাপারটা মাথায় খেললো আমার। এদিকে ড্রপ আসলো। স্কুল কলেজের বন্ধুদের সাথে দেখা হতে লাগলো। এরপর মনে হল আমি শুধু শুধুই দুশ্চিন্তা করছিলাম। ওইসব সম্পর্ক গুলোতে কখনোই জং ধরবে নাহ !
এদিকে নস্টালজিক ক্লাসে ঘটে যাওয়া প্রতি মুহূর্তের ঘটনা মিলালে দেখা যাবে সময় যেন থমকে আছে। একই গল্পে যেন কেবল চরিত্রগুলোর পরিবর্তন এসেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে চরিত্রগুলোও দর্পণ প্রতিবিম্ব! পার্থক্য থেকে যায় শুধু সময়ের। এই সময়টাই যেন পরিচালকের ভূমিকায় চরিত্র গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে! আহারে সময়। যখন অফুরান থাকে তখন চরিত্রায়নের জন্য গল্প পাওয়া যায় না, আর কতক ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি গল্প নিয়েও সময়ের অভাবে চরিত্রায়ন হয়ে উঠে না। কখনো তা থেকে যায় নতুন চরিত্রের জন্যে কখনোবা সেগুলো থেকে যায় গল্প হয়েই, যার চরিত্র গত।
বেশ কয়েক মাস গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। অবশ্য পরিবার আর পুরনো বন্ধুদের সাথেই বেশি সময় কেটেছে। এরিমদ্ধে দেশে বিদেশে ঘটে যায় সামাজিক অবক্ষয় জনিত নৃশংস-বর্বর-পাশবিক কিছু ঘটনা। যেগুলো আমাকে জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আবার চিন্তা করতে বারবার বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। আমিও হতে শুরু করলাম পরিবার কেন্দ্রিক। সিদ্ধান্ত নিলাম পারিবারিক পরিবেশ নির্মল রাখতে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে কোয়ালিটি টাইম ব্যায় করার। এগুলোর জন্য লক্ষ্যটা নড়বড় করা শুরু করে। কখনো গবেষক, কখনোবা চলচিত্র নির্মাতা-অভিনেতা, কখনো দেশ গঠনের কান্ডারি শিক্ষক আবার কখনোবা সাংবাদিক- রিপোর্টার। তবে এগুলোর মধ্যে একটি বিষয় কখনো চিন্তা থেকে সরানো হয়নি, মানবপ্রেম। যেটা ছোটবেলা থেকে বাবা-মা, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে শুনতে শুনতে এতবার শুনেছি যে মনে প্রাণে গেঁড়ে বসেছে। মন্ত্রটা হলো কারোর ভাল না করা গেলেও যেন ক্ষতি না করা হয়। ভাল হতে পয়সা লাগে না। পয়সা বেশিরভাগ ভাল কাজের জন্য লাগলেও মানুষকে খুশি করাটাও কম কথা নয় এই হতাশা-রোগবালাইয়ের যুগে। মানুষকে খুশি করা বলতে মন থেকে আসা একটা হাসিও হতে পারে। অথবা হতে পারে রিকশাচালক বৃদ্ধকে ভাড়ার বেশি ৫ টাকা দেয়া। তার মুখে কিছু বলতে হবে না, তাকে খুশি করার পুরস্কার তাত্ত্বিকভাবে হিসাবের খাতায় উঠে থাকার কথা। মূলকথা হল অন্যকে খুশি করে নিজে খুশি হতে হবে, হওয়া কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের কিছু না কিছু বিসর্জন দিতে হয়। এক্ষেত্রে জোর করে নিজেকে খুশি করতে হবে, একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে। দুঃখ গুলো এভাবেই হাসিতে-খুশিতে আড়াল করে রাখতে হবে।
আমাদের নস্টালজিক ক্লাস থেকে ঘটনা এখানে কিভাবে এলো? আহহা, এতো চিন্তা করলে চলে! একটা হাসি দিয়ে আপনার পাশের মানুষকে একটা হাসির কথা শুনিয়ে দিননা। আর হাসতে হাসতেই কাটিয়ে দিন বাকি জীবনটা। একটা হাসির কথা মনে পড়ে গেল।

থাক আজকে আর না বলি। হয়তো অন্য কোনদিন বলব। সেখানে অমন নস্টালজিকতা থাকতেও পারে। যদিও না থাকাটাই ভাল। কেন? কারনটা আপনিই ভাবুননা, অমন নস্টালজিক হতে গেলে যে আবার ড্রপ খেতে হবে। ব্যাপারটা কি আমার জন্য হাসির হবে?
শাওন
রাত ০১.৫৪
০২/০৮/২০১৯

২টি মন্তব্য:

  1. প্রাগৈতিহাসিক২২ অক্টোবর, ২০১৯

    অসাধারণ ভাই। আপনার লেখাটি পড়ে আমার ক্লাসের সেই বন্ধুটির কথা মনে পড়লো যাকে কখনও কারও সাথে বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখিনি। যদিও কোন লোক সেই বন্ধুটির সাথে রাফ ব্যবহার করত। সেও ড্রপ দিয়েছে। কিন্তু তার স্থান আর কেউ দখল করতে পারেনি। মনে হয় পারবেও না।

    উত্তরমুছুন

Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!

© Anari Production 2020. merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.