-তা তো কিছুটা বটেই...
চায়ের দোকানে অচেনা বড় ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল শীতলের।
হঠাৎ চায়ের দোকানের সামনে রাস্তায় মারাত্মক গতিতে ছুটে আসা হোন্ডার সাথে রিক্সা বেঝে যায়। চোখের পলকে উলটে যায় খালি প্যাডেল রিক্সা। স্পষ্ট দেখেছে সবাই নির্বোধ হোন্ডাচালক অকারনেই জোরে চালিয়ে আসছিল সরু রাস্তায়।
-দেখে চালাতে পারিস না বুড়া?
ব্যাথায় কাতর সদ্য মধ্য বয়স পার করা লোক নিজের কথা বলতে যায়,
-বাবা আপনেই তো...
আবার শাসায় রিক্সাচালককে। একটু জটলা হয়েছে। ভীড়ের মধ্যেই কেও বলতে লাগলো
শীতল হাসে, মুচকি হাসে। অবাক ও হয়। ছেলেটা সহজ-সরল নাকি বোকা? বোকাই হবে। আজকাল সহজ সরল মানেই তো বোকা।
শাওন
সকাল ৭.৫৪
বৃহস্পতিবার
০২/০৫/২০১৯
এদিকে পাকা রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় হাত-পায়ের চামড়াও উঠে যায় রিক্সাওয়ালার।
তার উপর ফিটফাট হোন্ডামালিক কষে এক চড় লাগিয়ে দেন।
কারন তার হোন্ডার হেডলাইটে স্পট পড়ে গেছে!
-দেখে চালাতে পারিস না বুড়া?
ব্যাথায় কাতর সদ্য মধ্য বয়স পার করা লোক নিজের কথা বলতে যায়,
-বাবা আপনেই তো...
আবার শাসায় রিক্সাচালককে। একটু জটলা হয়েছে। ভীড়ের মধ্যেই কেও বলতে লাগলো
-রিক্সা নিয়া বাইর হয় আর মনে মনে হেলিকপ্টার চালায়। হুশ থাকে না কোন!
-আর বইলেন না ভাই। এসব ছোটলোকদের জন্য দেশের এই হাল।
বাইকিং ইকুইপমেন্ট পড়া ড্যাশিং হোন্ডাওয়ালা সুর মিলায়। অত:পর রাস্তায় দাড় কড়ানো হোন্ডা নিয়ে ভ্রুম ভ্রুম করে চলে যায় সমাজস্বীকৃত ভদ্রলোকটি। এক মিনিটে ঘটে যায় যেন সব। এরই মধ্যে আরেক রিক্সা থেকে নামে ক্লাস এইটের এক ছেলে। হাতে অষ্টম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষার গাইড। মাত্রই এলো সে ঘটনাস্থলে। পরের পাঁচ মিনিটে জড়ো হয় আরো কয়েকজন রিক্সাচালক।
-শালারে আটকাইতেন আর দুইটা মিনিট। হাতটা কাইট্টা রাইখা দিতাম।
অন্য রিক্সাচালকদের মধ্যে একজন বলেন। আর কয়েকজন উলটানো রিক্সা ঠিক করছে আর বকছে।
-নিজেকে কি ভাবে? বাপের রাস্তায় চলে মনে করে?
...নানা বকাবকি/গালাগালি চলছে। সেই ছেলেটা ততক্ষনে ব্যাগ থেকে টুকরা কাপড় বের করে বৃদ্ধর আঘাত পাওয়া স্থান পরিষ্কার করতে থাকে। একটু স্যাভলন লাগিয়ে দেয় সেলুন থেকে নিয়ে। এরপর যে রিক্সায় এসেছিল ওতেই তুলে নেয়। হাসপাতালে যাবে বোধ হয়।
-আর বইলেন না ভাই। এসব ছোটলোকদের জন্য দেশের এই হাল।
বাইকিং ইকুইপমেন্ট পড়া ড্যাশিং হোন্ডাওয়ালা সুর মিলায়। অত:পর রাস্তায় দাড় কড়ানো হোন্ডা নিয়ে ভ্রুম ভ্রুম করে চলে যায় সমাজস্বীকৃত ভদ্রলোকটি। এক মিনিটে ঘটে যায় যেন সব। এরই মধ্যে আরেক রিক্সা থেকে নামে ক্লাস এইটের এক ছেলে। হাতে অষ্টম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষার গাইড। মাত্রই এলো সে ঘটনাস্থলে। পরের পাঁচ মিনিটে জড়ো হয় আরো কয়েকজন রিক্সাচালক।
-শালারে আটকাইতেন আর দুইটা মিনিট। হাতটা কাইট্টা রাইখা দিতাম।
অন্য রিক্সাচালকদের মধ্যে একজন বলেন। আর কয়েকজন উলটানো রিক্সা ঠিক করছে আর বকছে।
-নিজেকে কি ভাবে? বাপের রাস্তায় চলে মনে করে?
...নানা বকাবকি/গালাগালি চলছে। সেই ছেলেটা ততক্ষনে ব্যাগ থেকে টুকরা কাপড় বের করে বৃদ্ধর আঘাত পাওয়া স্থান পরিষ্কার করতে থাকে। একটু স্যাভলন লাগিয়ে দেয় সেলুন থেকে নিয়ে। এরপর যে রিক্সায় এসেছিল ওতেই তুলে নেয়। হাসপাতালে যাবে বোধ হয়।
শীতল দেখছিল সব। চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তার সাথে পূর্বে আলাপ করা ভাই বেপরোয়া হোন্ডাচালককে ধুতে থাকলেন অন্য চা-পায়ীদের নিয়ে, এতক্ষনের নীরবতা ভেঙে। শীতলের দীর্ঘনিশ্বাস চা টাকে আরো ঠান্ডা করে দেয়। এতক্ষনে একটা কথাও বলে নি শীতল, ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। কেও দেখেনি, কিন্তু হ্যাঁ শীতল নড়ে নি একটুকুনও।
রাত ১২ টার বেশি বাজে।
রাত ১২ টার বেশি বাজে।
বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে সে। ঘুম আসছে না। লাল চোখের হোন্ডাওয়ালা, চোখ ছলছল করা বৃদ্ধ আর তাকে সাহায্য করতে থাকা ব্যস্ত ছেলে। এক সমাজের তিন ছবি মাথায় ঘুরছিল। হোন্ডাওয়ালা অন্যায় করেছে, বিরাট অন্যায়। মেনে নেওয়ার মতো নয়। শীতল উত্তেজিত হয়ে যায়। নিজের এক হাত দিয়ে অন্য হাত ছোয় সে। নাহ, রক্ত তো টগবগ করে ফুটছে না। হৃতস্পন্দন ও স্বাভাবিক! কপালে ছোয়, নাহ! মাথায় ও রক্ত চড়ে নি। গা ঠান্ডা। তাকে কেও দেখলে বুঝতোই না সে কত রাগান্বিত এখন।
দিন যায়। বেশ কয়েকদিন। অনেক কিছু দেখে শীতল। আগের ঘটনার মতো ঘটনা, কলেজের ছেলেপুলের সিগেরেট ফোকার ঘটনা। কখনোবা গোল হয়ে আড্ডায় বসা ছেলেমেয়েদের নেশায় বূদ হয়ে থাকা অথবা গঞ্জিকা সেবন করা শুষ্ক চোয়ালের হিরোদের রাস্তার মোরে প্রাইমারি স্কুলের মেয়েদের ইভটিজিং করা (বাচ্চা গুলো বুঝে না ইভটিজিং কি অন্যদিকে সেই মুর্খগুলো ইভটিজিং বানান করতে পারবে না) কিন্ত নাহ, কিছুতেই কিছু হচ্ছে নাহ। ঘটনাগুলো শেষ হবার পরপরই আশেপাশের লোকগুলো অনেক প্রতিক্রিয়া দেখালেও শীতলের যেন অনুভূতি ভোতা হয়ে গিয়েছে।
শীতলের ব্যাপারটা কখনোই পছন্দ ছিল না। না, তার অনুত্তেজিত থাকাটা না। বরঞ্চ নেশাদ্রব্যের এতো সহজে পাবার ব্যাপারটা।
দিন যায়। বেশ কয়েকদিন। অনেক কিছু দেখে শীতল। আগের ঘটনার মতো ঘটনা, কলেজের ছেলেপুলের সিগেরেট ফোকার ঘটনা। কখনোবা গোল হয়ে আড্ডায় বসা ছেলেমেয়েদের নেশায় বূদ হয়ে থাকা অথবা গঞ্জিকা সেবন করা শুষ্ক চোয়ালের হিরোদের রাস্তার মোরে প্রাইমারি স্কুলের মেয়েদের ইভটিজিং করা (বাচ্চা গুলো বুঝে না ইভটিজিং কি অন্যদিকে সেই মুর্খগুলো ইভটিজিং বানান করতে পারবে না) কিন্ত নাহ, কিছুতেই কিছু হচ্ছে নাহ। ঘটনাগুলো শেষ হবার পরপরই আশেপাশের লোকগুলো অনেক প্রতিক্রিয়া দেখালেও শীতলের যেন অনুভূতি ভোতা হয়ে গিয়েছে।
শীতলের ব্যাপারটা কখনোই পছন্দ ছিল না। না, তার অনুত্তেজিত থাকাটা না। বরঞ্চ নেশাদ্রব্যের এতো সহজে পাবার ব্যাপারটা।
উৎস খুঁজে হয়রান শীতল। কোথা থেকে আসে, বিক্রিই বা কোথায় হয়!
অনেক দিন পর।
বেশ গরম পড়েছে ঢাকায়। বয়েজ স্কুলের পাশে একটা শরবতের দোকান খুব চলে। প্রায় সময়ই জটলা থাকে।
আজকে ছুটির দিন। তাছাড়া সকাল বেলা। শরবতের জন্য অফ-পিক আওয়ার। ভীড় নেই মিনিট কয়েক আগে খোলা দোকানটায়।
-মামা, শরবত কোনটা কত?
গোছাতে গোছাতে “বাবর মামার হাজারী শরবত” দোকানের প্রোপাইটর ও একমাত্র বিক্রেতা বাবর মামা বলেন
-কোনটা খাবেন বলেন মামা, দাম নিয়ে ভাইবেন না।
-কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল কত?
-বিশ টাকা মামা।
-হুম। আর দামির মাঝে কত দামের আছে?
-দামি আছে হাজার টাকা পর্যন্ত।
-হা হা হা, মজা নিলা মামা।
মামা মুচকি হাসে। উত্তর দেবে এমন সময় একটা ছেলে দামের লিস্টের সাথে ছবি দেখে অনেক ভেবে বলে
-মামা, কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল দেন তো একটা, এই বোতলে দিয়েন।
শীতল চোখ ছোট করে দেখে, “আরেহ ! এটাতো সেই ছেলেটা। রিক্সা চাচাকে হাসপাতাল নিয়েছিল। ” একটু খাতির করার ইচ্ছা হয় শীতলের।
-কি যে খাও তোমরা! ড্রাগনফ্রুট, আঙুর, মিয়াজাকি আমের মতো দামি শরবত থাকতে বাতাবি লেবুর শরবত খায় কেও আজকাল?
-না ভাই, ওটাই দেন।
-আমি টাকা দিই, আমি চিনি তোমাকে। সেদিন দেখেছিলাম রিক্সা চাচাকে সাহায্য করেছিলে।
হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে ছেলেটা।
-না ভাই, দামের ব্যাপার না। দামি ফলে আজকাল কি না কি মেশায় কে জানে!
বলে আবার হাসে। ককটেল রেডি।
-নেন মামা, আপনার জন্য স্পেশাল করে বানিয়ে দিলাম।
টাকাটা শীতল দিতে চাইলেও ছেলেটা দিতে দেয় নি। বোতল নিয়ে হনহন করে হাটা শুরু করে সে।
শীতলের ভালো লাগল। ছেলেটা এ যুগের না।
-তা মামা বললা না, তোমার শরবতে কি সোনা-রুপা-হিরা কিছু দাও নাকি হাজার টাকারটায়?
-না মামা, ওসব সোনা রুপায় না আছে স্বাদ না কোন ক্ষমতা।
-বল কি? তোমার শরবত কি মন্ত্রীর হাতে বানিয়ে আনো নাকি! অনেক ক্ষমতাবান শরবত... হা হা হা।
-মন্ত্রী বানায় না। তবে...
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে শরবত মামা
-হাজার টাকার শরবত খেলে আপনি নিজেই মন্ত্রী হয়ে যাবেন। মন্ত্রী কি, নেইল আর্মস্ট্রং হয়ে প্রথমবার চাদেও যাইতে পারবেন!
শীতলের কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলো। বিস্তারিত জানতে চায় সে। মামা তার গোপনে রাখা কিছু ট্যাবলেট আর কয়েক বোতল সিরাপের মতো কিছু দেখায়। বোঝায় কোন অসুবিধাই হয় না সেগুলো নেশাদ্রব্য।
-তা মামা তোমার কাছ থেকে লোকে এগুলো খাবেই কেন? জানবেই বা কিভাবে?
শরবত বাবর শীতলকে কাস্টমার বানাতে ব্যাস্ত, শীতলের ইতস্তত নড়াচড়ায় ও সে চোখ থেকে চোখ সরাচ্ছে না।
-আরে মামা, জানার কত রাস্তাই তো আছে! যারা একবার খায় আবার আসে। এই স্কুলের স্টাফ, মামারা, চাচারা তো আছেই স্যাররাও আছেন কয়েকজন জেনেশুনেই নিয়ে যান।
-হাজারটাকায় কয়জন ছাত্র কিনে খাবে?
-হাজার টাকায় খাবে কেন প্রথমেই ! ওই যে ছেলেটা কাগজি-বাতাবির ককটেল নিয়ে যাচ্ছে, ওতেই আমার ইনভেস্টমেন্ট দেয়া। মাল মিশিয়ে দিয়েছি। খাবে, নেশা হবে, আবার আসবে। বুঝুক আর না বুঝুক। পরদিন ৫০ টাকা, এরপর ১০০, ৫০০, ১০০০... টাকা এভাবেই খরচ করবে ধীরে ধীরে।
মামা খুব উৎফুল্লভাবে বলছিলেন। সকালের রোদ ঊঠেনি তখনো। কথায় আছে আবেগে পড়া মানুষের বুকে ছুড়ি বিধলেও টের পায় না। আর মামার আবেগ উৎফুল্লতায় তো টাকা-নেশা জড়িত। গভীর আবেগ।
শীতল মনে করিয়ে দিল মামাকে তিনি অতি উৎসাহিত হয়ে গিয়েছেন।
-মামা, আপনি মনে হয় টাকার নেশায় অনেক আবেগ গুলিয়ে ভুলবাল বকছেন!
-মানে?
-মানে আপনার বুকে ছুড়ি বিঁধে আছে, আপনার তো কষ্ট পাওয়ার কথা। অনেক কষ্ট...
শীতলের নীরব চোখ মামার বুকের দিকে। মামা আঁতকে উঠে। তার বুকে লেবু আপেল কাটার ছুড়ি ঢুকে আছে। কয়েকটা অজ্ঞাতনামা ট্যাবলেট মামার মুখে গুজে দেয় ঠান্ডা মাথার শীতল।
শরবতওয়ালা মামা আগে কখনো মরেনি। মরার আগে কি করতে হয় জানে না, অভিজ্ঞতা নেই যে! ছুড়িটা বুক থেকে টেনে বার করতে চায়। উল্টো পাশে করাতের মতো খাঁজ কাটা অংশ যেটা দিয়ে সে ঝিমুনি ধরানো ট্যাবলেট অর্ধেক করত গুড়ো করার আগে, সেটা কশেরুকায় আটকে ধরে তার। শ্বাসনালী ভেদ করে ঢুকে গেছে, কথাও বেরুচ্ছে না।
ওদিকে শীতল দৌড়ায়।
পালাতে? নাহ, সেই ছেলেটাকে থামাতে। ছেলেটার সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়। হ্যাঁচকা টানে বোতলটা নিয়ে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিল।
-এতো দেমাগ কেন তোর? বলেছিলাম না আমি দিয়ে দিই টাকাটা!
ছেলেটা বোকা বনে গেল এমন আচরণে।
-কি, দেখছিস কি? যাহ, বাসায় যা। মাকে বল কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল বানাতে। আমার জন্যেও বলিস বানাতে, বাইরে দাঁড়াব। আর হ্যাঁ বরফ দিতে বলিস, গায়ের রক্ত গরমে টগবগ করছে মনে হচ্ছে।
-আহহা আংকেল, শান্ত হোন। আপনাকে দেখলে তো লোকে ভাববে খুন করে এসছেন। চলেন।
আজকে ছুটির দিন। তাছাড়া সকাল বেলা। শরবতের জন্য অফ-পিক আওয়ার। ভীড় নেই মিনিট কয়েক আগে খোলা দোকানটায়।
-মামা, শরবত কোনটা কত?
গোছাতে গোছাতে “বাবর মামার হাজারী শরবত” দোকানের প্রোপাইটর ও একমাত্র বিক্রেতা বাবর মামা বলেন
-কোনটা খাবেন বলেন মামা, দাম নিয়ে ভাইবেন না।
-কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল কত?
-বিশ টাকা মামা।
-হুম। আর দামির মাঝে কত দামের আছে?
-দামি আছে হাজার টাকা পর্যন্ত।
-হা হা হা, মজা নিলা মামা।
মামা মুচকি হাসে। উত্তর দেবে এমন সময় একটা ছেলে দামের লিস্টের সাথে ছবি দেখে অনেক ভেবে বলে
-মামা, কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল দেন তো একটা, এই বোতলে দিয়েন।
শীতল চোখ ছোট করে দেখে, “আরেহ ! এটাতো সেই ছেলেটা। রিক্সা চাচাকে হাসপাতাল নিয়েছিল। ” একটু খাতির করার ইচ্ছা হয় শীতলের।
-কি যে খাও তোমরা! ড্রাগনফ্রুট, আঙুর, মিয়াজাকি আমের মতো দামি শরবত থাকতে বাতাবি লেবুর শরবত খায় কেও আজকাল?
-না ভাই, ওটাই দেন।
-আমি টাকা দিই, আমি চিনি তোমাকে। সেদিন দেখেছিলাম রিক্সা চাচাকে সাহায্য করেছিলে।
হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে ছেলেটা।
-না ভাই, দামের ব্যাপার না। দামি ফলে আজকাল কি না কি মেশায় কে জানে!
বলে আবার হাসে। ককটেল রেডি।
-নেন মামা, আপনার জন্য স্পেশাল করে বানিয়ে দিলাম।
টাকাটা শীতল দিতে চাইলেও ছেলেটা দিতে দেয় নি। বোতল নিয়ে হনহন করে হাটা শুরু করে সে।
শীতলের ভালো লাগল। ছেলেটা এ যুগের না।
-তা মামা বললা না, তোমার শরবতে কি সোনা-রুপা-হিরা কিছু দাও নাকি হাজার টাকারটায়?
-না মামা, ওসব সোনা রুপায় না আছে স্বাদ না কোন ক্ষমতা।
-বল কি? তোমার শরবত কি মন্ত্রীর হাতে বানিয়ে আনো নাকি! অনেক ক্ষমতাবান শরবত... হা হা হা।
-মন্ত্রী বানায় না। তবে...
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে শরবত মামা
-হাজার টাকার শরবত খেলে আপনি নিজেই মন্ত্রী হয়ে যাবেন। মন্ত্রী কি, নেইল আর্মস্ট্রং হয়ে প্রথমবার চাদেও যাইতে পারবেন!
শীতলের কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলো। বিস্তারিত জানতে চায় সে। মামা তার গোপনে রাখা কিছু ট্যাবলেট আর কয়েক বোতল সিরাপের মতো কিছু দেখায়। বোঝায় কোন অসুবিধাই হয় না সেগুলো নেশাদ্রব্য।
-তা মামা তোমার কাছ থেকে লোকে এগুলো খাবেই কেন? জানবেই বা কিভাবে?
শরবত বাবর শীতলকে কাস্টমার বানাতে ব্যাস্ত, শীতলের ইতস্তত নড়াচড়ায় ও সে চোখ থেকে চোখ সরাচ্ছে না।
-আরে মামা, জানার কত রাস্তাই তো আছে! যারা একবার খায় আবার আসে। এই স্কুলের স্টাফ, মামারা, চাচারা তো আছেই স্যাররাও আছেন কয়েকজন জেনেশুনেই নিয়ে যান।
-হাজারটাকায় কয়জন ছাত্র কিনে খাবে?
-হাজার টাকায় খাবে কেন প্রথমেই ! ওই যে ছেলেটা কাগজি-বাতাবির ককটেল নিয়ে যাচ্ছে, ওতেই আমার ইনভেস্টমেন্ট দেয়া। মাল মিশিয়ে দিয়েছি। খাবে, নেশা হবে, আবার আসবে। বুঝুক আর না বুঝুক। পরদিন ৫০ টাকা, এরপর ১০০, ৫০০, ১০০০... টাকা এভাবেই খরচ করবে ধীরে ধীরে।
মামা খুব উৎফুল্লভাবে বলছিলেন। সকালের রোদ ঊঠেনি তখনো। কথায় আছে আবেগে পড়া মানুষের বুকে ছুড়ি বিধলেও টের পায় না। আর মামার আবেগ উৎফুল্লতায় তো টাকা-নেশা জড়িত। গভীর আবেগ।
শীতল মনে করিয়ে দিল মামাকে তিনি অতি উৎসাহিত হয়ে গিয়েছেন।
-মামা, আপনি মনে হয় টাকার নেশায় অনেক আবেগ গুলিয়ে ভুলবাল বকছেন!
-মানে?
-মানে আপনার বুকে ছুড়ি বিঁধে আছে, আপনার তো কষ্ট পাওয়ার কথা। অনেক কষ্ট...
শীতলের নীরব চোখ মামার বুকের দিকে। মামা আঁতকে উঠে। তার বুকে লেবু আপেল কাটার ছুড়ি ঢুকে আছে। কয়েকটা অজ্ঞাতনামা ট্যাবলেট মামার মুখে গুজে দেয় ঠান্ডা মাথার শীতল।
শরবতওয়ালা মামা আগে কখনো মরেনি। মরার আগে কি করতে হয় জানে না, অভিজ্ঞতা নেই যে! ছুড়িটা বুক থেকে টেনে বার করতে চায়। উল্টো পাশে করাতের মতো খাঁজ কাটা অংশ যেটা দিয়ে সে ঝিমুনি ধরানো ট্যাবলেট অর্ধেক করত গুড়ো করার আগে, সেটা কশেরুকায় আটকে ধরে তার। শ্বাসনালী ভেদ করে ঢুকে গেছে, কথাও বেরুচ্ছে না।
ওদিকে শীতল দৌড়ায়।
পালাতে? নাহ, সেই ছেলেটাকে থামাতে। ছেলেটার সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়। হ্যাঁচকা টানে বোতলটা নিয়ে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিল।
-এতো দেমাগ কেন তোর? বলেছিলাম না আমি দিয়ে দিই টাকাটা!
ছেলেটা বোকা বনে গেল এমন আচরণে।
-কি, দেখছিস কি? যাহ, বাসায় যা। মাকে বল কাগজি লেবু আর বাতাবি লেবুর ককটেল বানাতে। আমার জন্যেও বলিস বানাতে, বাইরে দাঁড়াব। আর হ্যাঁ বরফ দিতে বলিস, গায়ের রক্ত গরমে টগবগ করছে মনে হচ্ছে।
-আহহা আংকেল, শান্ত হোন। আপনাকে দেখলে তো লোকে ভাববে খুন করে এসছেন। চলেন।
শীতল হাসে, মুচকি হাসে। অবাক ও হয়। ছেলেটা সহজ-সরল নাকি বোকা? বোকাই হবে। আজকাল সহজ সরল মানেই তো বোকা।
শাওন
সকাল ৭.৫৪
বৃহস্পতিবার
০২/০৫/২০১৯
পরিমার্জনঃ
ভোর ৪.৪০
বৃহস্পতিবার
০৯/০৯/২০২১
কোন মন্তব্য নেই
Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!