Header Ads

Bodrul-Islam-bodrul-070-bodrul070-bodrul-070-tutorial

গুডুর ডায়েরী




ডাক নাম গুডু। কোথা থেকে এই নাম আসলো বা কেন এই নাম দেয়া হয়েছে তার কোন সঠিক কারণ নেই। এমন ডাক নামের ক্ষেত্রে উৎস থাকাটাও খুব একটা জরুরী নয় বৈকি! বাবাই ডাকেন বেশি। চাকরির সুবাদে বাইরে বাইরে থাকায় ফিরে এসেই হাঁকেন ,


- শিউলি, গুডু মিয়া কই গো ?শিউলি বা মিসেস শিউলি গুডুর মা। বাড়ির দুই ছেলের মাঝে ছোট সে। বড় সাইদুল। বাবার মতো চাকরির সুবাদে না হলেও পড়াশোনার জন্য তার খুব একটা সময় বাসায় থাকা হয় না। কখনো খালার বাসায় কখনোবা ফুফুর বাসার পাশে, এভাবেই চলছে তার পড়ালেখা। গ্রামে থাকলেও বাবা মায়ের চিন্তা গুটিকতক মানুষের থেকে হলেও একটু উন্নত বলতেই হবে। এলাকায় থাকলে লেখাপড়া হবে না এটা বোঝা সারা হয়ে গিয়েছিল মিসেস শিউলির।আহ, শিউলি- গুডু- সাইদুলেই আটকে রইলাম এখনো! উপরের কথাগুলো বছর পনেরোর মত পুরাতন এখন। তবুও ফ্লাশব্যাকের দৃশ্য গল্পে থাকলে রেট্রো এবং পারিবারিক পারিবারিক ভাবটা আসে না! আরেকটু বলি তাহলে তাদের নিয়ে।গুডুর বয়স তখন চার কি পাঁচ। কিভাবে সে জেনেছে মেলা বসেছে বটতলা বাজারে। বটতলার নাম ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেকবার শুনতে হয়েছে কারণ এটাই কাছাকাছি ভাল বাজার। বুলি শিখানোর সময় কত কিছুই তো শিখানো হয়। যেমন ধরা যাক বলল গুডুকে,-নানুর বাড়ি কোনদিকে?-উম্মে... গুডুর জবাব।আসলে ও কেবল মা-আম্মা শেখার পর “উম্মে” বলা শিখেছে! গ্রামের ভাষায় “উম্মে” অর্থ “ওই দিকে”। হ্যাঁ একটা দিক নির্দেশ করতে হয় হাত দিয়ে সেটা গুডু করেনি বলে পুব দিকে মুখ করে থাকা গুডুকে হাত ধরে বাম দিক দেখিয়ে বলে দেয়া হল-নানু বাড়ি উম্মে।পরীক্ষা প্রথাটার সাথে আমরা ছোটবেলার থেকেই পরিচিত হয়ে যাই খেয়াল করা হোক আর না হোক। পরক্ষনেই আবার একই প্রশ্ন-নানু বাড়ি কোনদিকে?-উম্মে... এবার বা হাত তুলে দেখিয়েও দিল।যখন-তখন পরীক্ষা নিয়ে আশানুরূপ ফল পেয়ে প্রশ্নকর্তা খুবই উৎফুল্ল হন। এভাবেই গুডু শিখে যায় কোন দিকে কি। বাজার কোন দিকে এটাও শিখেছিল এভাবেই হয়ত। অতএব গুডু মেলার কথা শুনতে পেরে একা একাই মেলায় যাবে ভাবলো। এ আর এমন কি! ভুলে যাবেন না চার থেকে পাঁচ বছর বয়স তার তখন। সে যুগে ছেলেধরা ছিল, যারা থলে আর চকোলেট নিয়ে ঘুরত। চকোলেট দিয়ে বা চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ছোট ছোট ছেলেদের বস্তায় ভরে নিয়ে চলে যেত তারা। তাদের কে দেখেনি কখনো সে তবে তাদের নাম অনেকবার শুনেছে খাওয়ার সময়।-এই নলা (লোকমা) খাও নাহলে ছেলে ধরা নিয়ে যাবে।ওটা শেষ হলে থালার বাকি ভাত শেষ করার জন্য অন্য কাহিনী বলতে হতো। প্রত্যেকটা লোকমার একেকটা নাম দেয়া হতো।-এটা ইস্কুল ঘর, এটা দাদুর বাড়ি, এটা লিপা আপুদের পুকুর...খুব বেশি বাড়িঘর বা স্কুল কলেজ ছিল না আসে পাশে তাই শেষ লোকমার নাম দেয়া যেত না অনেক সময়। তাই শেষ লোকমায় আবার ছেলেধরাকে আনতে হতো এখনকার অযৌক্তিক সিনেমার গল্পের মতো, যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই।-এইটা নলাটাই শেষ-উহুম-খাও আব্বু শেষ নলাটা-উহুম, না... এ এ এ...-এটা খাইলে ছেলেধরা নিয়ে যেতে পারবে না-হুম?-তোমার অনেক শক্তি হবে, ছেলেধরাকে একটা ভিশ্যুম দিবা এক্কেবারে...-হা হা হাআসলে হা হা টাইপের হাসি না। খিলখিলিয়ে হেসে উঠতো গুডু। তাতে মুখগহ্বর যতটা দ্বিধা হত তাতেই গহ্বরের কয়েকগুনের লোকমা পুরে দেয়া হতো। গুডুকেই না শুধু সব্বাইকেই, মানে সব বাচ্চা-কাচ্চাদের। তাতে তারা ছেলেধরাপ্রুফ হয়ে উঠতো! অন্য ছেলেপুলেরা বুঝত না বা তাদের ক্ষমতা হয়ত তারা ভুলে যেত হয়ত, গুডু ভুলে নি সেদিন। তাই সে মেলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। বটতলা বাজারের মেলার উদ্দেশ্যে, একাই বেরুল কারণ পেট ভরে ভাত খেয়ে নিয়েছে এখন তাকে আর ছেলেধরা নিতে পারবে না। “বটতলা বাজার উম্মে” এবং এই উম্মে মুখ করে হাটা শুরু করল সে। বাড়ির কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে সে। বাজারের মেলা আজকে দেখে আসতে হবে তাকে। মেলায় খেলনা পাওয়া যায়, খেলনা আনতে হবে। অনেকদুর হাটে। ছোটপায়ে রাস্তা শেষ হয় না কিন্তু সে হাটে এখনকার হিন্দি মেগাসিরিয়ালের মতো অনন্ত যেন সে হাটা। অনেক্ষন পর কারোর নজর পরে যেন তার উপর।-কই যাও?-মেলায়।-একলা একলা আসছো তুমি?-হুম, মেলায় যাব।-চলো তোমার বাসায় নিয়ে যাই?-না মেলায় যাব আমি...-আচ্ছা চল মেলায় ই যাই।গুডু ভাবে, ছেলেধরা নয়তো? নাহ, পেট ভরে ভাত খেয়েছে। ছেলেধরা ধরার সাহস পাবে না! তাছারা সে জানে মেলা উম্মে এবং লোকটা ওইদিকেই নিয়ে যাচ্ছে তাকে কোলে করে। তাই আইডেন্টিটি ভেরিফাইড,”উনি ইজ নট এ ছেলেধরা!”
এদিকে বাড়িতে হইচই পরে যায় গুডু নেই। পুকুরে পাশের পুকুরে, দাদুর বাড়ির পুকুরে, লিপা আপুদের পুকুরে সহ সকল জলাধারে খোঁজাখুঁজি শুরু হল। গুডু নেই। আশেপাশের কারোর বাসায় ও নেই। গুডুর মা হতবিহবল, তার উপর গুডুর বুবুর আহাজারি-আমার নাতি কই... তুই কই থাকস... এই বাচ্চাটার খোজ রাখতে পারস না, তোকে কিসের জন্যে এনেছিলাম? আমার নাতিরে আইনা দে ছেড়ি। আমার দাদুরে আইনা দে।চারদিকে সারা পরে গেল।-গুডুরে দেখছেন?-নাহ...-চাচা আপনে দেখছেন?-মুন্সিবাড়ির?-হ চাচা-বাবুলের ছ্যাড়া?-হ-দাড়িওয়ালা বাবুল?-চাচা হ, দেখছেন?-ইঞ্জিনিয়ার বাবুলের? সাইদুল না নাম?-না চাচা গুডু?-অইটা কবে হইছে আবার!-চাচা সোজা কথায় বলতে পারেন না! সবাই টেনশনে আর আপনি...!-ও বকুলের মা, কারে খোঁজ?-মুন্সিবাড়ির বড় দাড়িওয়ালা ইঞ্জিনিয়ারের ছোট ছেলে...-আহহা বকুলের মা, গুডু কইলেই তো পার। ওই বাড়ির পোলাপান কে না চিনে?-হ গুডু। দেখছেন রহমান ভাই?-হেরে তো বেইন্নার সময় দেখছিলাম উইম্মে যাইতে।-বটতলার দিকে?-হ-ফিরাইলেন না ওরে?-আমি কি ভাবছি মুন্সিবাড়ির পোলা একলা মেলায় যাইতাছে!বকুলের মা দৌড়ায়। একটা অনিশ্চয়তার দুশ্চিন্তা তার মাথায় ভর করে। ছেলেধরা যদি নিয়ে যায় মেলা থেকে? মেলায় তো হারহামেশাই বাচ্চা হারিয়ে যায়। এতো মানুষের ভিড়! পেছন দিকের রাস্তা পার হয়ে যখন মসজিদের রাস্তার সামনে আসছে তখন-ও বকুলের মাদাঁড়ায় বকুলের মা। বাড়ি থেকে ডাকছে কে যেন।-ও বকুলের মা... গুডুরে পাইছে। আয়া পরো।দৌড়ে বাসায় আসে। মা শাসাচ্ছে গুডুকে অথচ একটু আগেই কেদেকুটে এককখান হয়ে গিয়েছিল। মাকে বোঝা দায়।-তুই একলা একলা কিভাবে যাওয়ার সাহস করলি? ছেলেধরা যদি নিয়া যাইতো?-পেট ভরে ভাত খাইছি না, ছেলেধরা ধরলে এক্কেবারে ভিশ্যুম দিতাম।সবাই হাসি-কান্নার দ্বিধা-দ্বন্দে থেকে হেসেই উঠলো। বাচ্চা বলে কি! গুডুর হাতে দুইটা খেলনা। যেগুলোর জন্যই তার মেলায় যাওয়া।-কে কিনে দিছে?আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ওয়াহাব ভাই। বাবা-মা ওয়াহাব মামু নামে ডাকেন উনাকে। একরকম অঙ্ক পড়ার আগেই সম্পরকের অঙ্ক মিলাতে শিখে গিয়েছিল সে অমন ভাবে। মায়ের মামা মানে তার ভাই, মায়ের মামা ভাই ছাড়াও মায়ের ভাই শালা এবং বাবার বড় ভাই ভাসুর এবং ছোট ভাই কাকা ইত্যাদি শিখেছিল। হ্যাঁ তার বেশিরভাগই ভুল ছিল, মায়ের ভাই বাবার শালা বা বাবার বড় ভাই জেঠু ইত্যাদি সময়ে সময়ে শিখতে হয়। যাই হোক সেই ওয়াহাব ভাই বামুনখালি পুরবপারা আকা বাজাড়ি পাড়ায় থাকেন। টুকটাক কবিরাজি ও ওঝার কাজ ও করেন তিনি। খুলে বললেন গুডুকে কিভাবে কোথায় পেলেন। এরপর অনেক সমাদর করা হল উনাকে এবং বিদায় নিলেন। সিনেমার গল্প হলে হয়তো মুরুব্বি গোছের কেও বলত-বেটা, তু বহত দূর যায়েগা। আকেলে আকেলে মেলা কে লিয়ে চাল পাড়া, সেরেফ গেয়ি নেহি খিলোনে ভি লেকার আয়া! তেরে মাকান বহত উচে পার হোগি...(বাপ তুই অনেক দূর যাবি, যেতে যেতে হারিয়ে যাবি... এমনি হবে হয়ত অর্থটা। বাজারটা যেহেতু দূরে ছিল এবং গুডু সেখানে যেতে পেরেছিল। আসলে হিন্দি সিনেমায় শুনেছিলাম এমনি ঘটনার জন্য এমন কথা, সাবটাইটেল ছিল। তবে ইংরেজিতে থাকায় এতটুকুই উদ্ধার করা গিয়েছে)এরপর হয়ত একটা গান হত, এরপর গুডু বড় হয়ে সালমান শাহ্‌ বা সালমান খান কিছু একটা হয়ে যেত কিন্তু তা হয় নি। বাস্তবে তো আর এমনটা হয় না। গুডুর জীবনের শুরুটা এমনি ছিল। অনেক কিছুই ধরে নিতে পারেন উপরের ঘটনা থেকে; চঞ্ছলতা, নতুন মানুষের সাথে কথা বলা বা নতুন কিছুর টানে বিপদের পথেও না বুঝে পা বাড়ানো। ওগুলোও ঠিক আছে বিশ্লেষণী দৃষ্টিকোণ থেকে। তবে আমি বোঝাতে চেয়েছি মানুষের প্রতি আস্থা-বিশ্বাসের জায়গাটা এভাবেই শুরুতে ভরসা করে নিয়েছিল গুডুর ছোট্ট সরল মনে। কাদামাটির দাগ শুকালে যেমন থেকে যায় এভাবেই হয়তো তার অজান্তেই একটা বিশ্বাস-ভরসার দাগ লেগেছিল যে, মানুষ ভাল; বিপদে আপদে মানুষ মানুষের কাজে আসে আর কাছের হলে তো কথাই নেই! (চলবে) *Editableশাওনরাত ০১.৩৯২৩/০৮/২০১৯

কোন মন্তব্য নেই

Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!

© Anari Production 2020. merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.