Header Ads

Bodrul-Islam-bodrul-070-bodrul070-bodrul-070-tutorial

বন্ধু

সোহান আর মিনহাজ খুব ভাল বন্ধু সেই ক্লাস ৭ থেকে। একসাথে খেলাধুলা, একি কাপড় কেনা সহ ঘুরাঘুরি হয় অনেক।অবশ্য প্রতিযোগিতা যে নেই তা নয়। খেলাধুলায় দুজন কাছাকাছি (মিনহাজ একটু ভাল), আর্থিক সঙ্গতি কাছাকাছি বা একই। একই এলাকায় থাকে এখন, একিই টিউশন টিচার ওফ আর বলা যাবে না। হ্যাঁ, স্কুল ভিন্ন (সোহানেরটা নামে-ফলাফলে ভালো)।
খেলাধুলায় অগ্রগামী মিনহাজ এলাকার টিমে খেলে। অন্য এলাকায় খেলতে যায়। খেলাগুলো প্রতিযোগীতায় ভরপুর , চলে বাজি (ভদ্রসমাজের চোখে জুয়া)। মাঝে মাঝে একটু আধটু ঝামেলা বেধে যায়, শেষ ও হয় না অনেকগুলো। অবশ্য মিনহাজের একটা পরিচিতি আছে। মফঃস্বল বা গ্রামে খেলতে গেলে তার একটা শিক্ষিত-উচ্চশ্রেণী ইত্যাদির বহিঃপ্রকাশ থাকে যেটা ভাল। দুই চারটা নিম্ন মানসিকতার ঘটনা ঘটলেও সেগুলো প্রভাব ফেলতে পারে না তেমনভাবে। এই যেমন খেলায় হেরে গেলে বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখানো। তার মতে সে অন্য লেভেলের, তাদের সাথে আমার তুলনা দেয়ার মানেই হয় না!
যাই হোক, আজকে ছুটি। টিং টিং... কলিংবেলের শব্দ হলো।
-ভিতরে আয়।
গেইট খুলল সোহান। ঘরে ঢোকার আগে বাগানটার দুদিক নজরে পড়ল, দুটো ফুলগাছ বেড়েছে, মিস লণ্ডভণ্ড জাতের ফুল গাছ ।
আসলে গাছটার নাম লন্ডমিস। এটাকেই উল্টাপাল্টা সোহান আর মিনহাজ মিস লণ্ডভণ্ড ডাকে। আরো অনেকভাবে ডাকে। কয়েকটায় সেন্সর করতে হবে।
-চল যাই খেলতে
-একটু দাড়া। গোসল প্রায় শেষ, গ্লিসারিনটা লাগিয়ে বেরোচ্ছি।
-তারাতারি কর। তুই তো আবার জ্যামে আটকা মার্সিডিজ ! চলে না ঠেলা ছাড়া
অনেকটা কাজে দিল কথায়, সোহান আগে আগেই বেরোল। ব্যাট বল নিয়ে তারা মন্ডল বাড়ির পেছনে খেলতে গেল।ছোট্ট একটা খালি জায়গা, মন্ডল বাড়ির পেছন দিকের। বাড়ির ওয়াল স্টাম্প, তার বিপরীতে উচু দেয়াল ২০/২৫ হাত দূরে যা মুলত বাউন্ডারি লাইন। ১ম ওভার, মিনহাজ ১ নাম্বারে খেলছে, ৩ চার মারলো। ও হ্যাঁ, এটা মিনহাজের মত।
কিন্তু সোহান বলে,
-কিসের তিনটা! দুইটা বলেন, ওইটা ওয়ালে এ লাগে নি...
-বাদ দাও, বাদ দাও... ওয়াল এ লাগে নাই বলা বাদ দাও
ইমন, রিপন মামারাও মনেই করেছিল চার হয়েছে, তবুও মিথ্যা বলার ছেলে না।
যাই হোক নানা তর্কের সোহানের বিজয় হলো। সে তিনটা চার হাকিয়ে ১ম হয়, মিনহাজের ২ টা চার থাকায় সে দ্বিতীয়। আর বাকি সবাই একটা করে।
-এটাই শেষ ম্যাচ।
-আচ্ছা। বল কর তুই...
সায় দিল সবাই। খেলা শেষ হয় সেদিনের মতো। একটা চাপা ক্ষোভ বসে গিয়েছিল মিনহাজের মাথায়।
সোহান এমনটা করতে পারলো ! সবাই বাসায় চলে যায় যার যার।


ঘন্টা খানেক পর
মিনহাজ একটা সিদ্ধান্ত নেয় হুট করে। এমন সিদ্ধান্ত হুট করেই নেয়া হয়। বিষয়টা সোহানের পছন্দ হবে ভাবলো সে।
যদিও সোহানের প্রতি অনেক নেতিবাচক চিন্তা আসছিল, আত্মসংযম করল।
ক্রিং ক্রিং... সোহানের ফোন বেজে উঠে।
-চল আজকে কাউরাইদ যাই !
-এখনি?!
-হ্যাঁ।
ওই জায়গাটা সোহানের ভীষন পছন্দের। ঢাকা থেকে ট্রেনে আসার সময় দেখেছিল তারা। একটা রেলব্রীজ পার হয়েছিল ট্রেনটা। চমৎকার সে দৃশ্য, সেদিন ই ঠিক হয়ে গিয়েছিল একদিন আসবে এখানে।
তাই আধ ঘন্টার ভিতর সিদ্ধান্ত নিয়ে দুঘন্টায় পৌছে যায় সেখানে। এতটা দূর ও নয় ট্রেনে গেলে। স্টেশন নামলো দুজন। কাউরাইদ স্টেশন। এখান থেকে হাটা পথ রেলব্রীজ।
স্টেশনটা এতো বড় নয়, তবুও লোক নেই এমন ও নয়। হাটতে হাটতে রেলব্রীজ এসেগেলো কয়েক মিনিটেই।
-চল রেললাইন ধরেই নদী পার হই !
-আচ্ছা চল...
তারা এডভেঞ্চারাস। একটু ভয় থাকলেও (আসলে অনেক ভয়ানক) এগোতে থাকলো। দুজন মাঝপথে এসে থামলো, থামতে হলো। সামনে ট্রেন আসছে যে! নিচে ভরা জোয়ার আসা নদী। এডভেঞ্চারাস আরো কয়েকজন ছিল সেখানে, যারা এলাকার বা পাশের এলাকার। ট্রেন আসলে তারা এমনি লাফায় পানিতে। দুই বন্ধু আবার তেমন না, তারা উলটো পথে দৌড়।
কিন্তু পা ফসকে যায় বোধ হয় সোহানের, মিনহাজ জান নিয়ে পালাচ্ছে। সোহান ততক্ষনে নদীতে, তার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে এডভেঞ্চারাস ছেলেপুলে গুলো। তাদের হাভভাবে বোঝা যাবে না তারা ইচ্ছা করেই ঝাঁপাচ্ছে বরং মনে হবে পড়েই গেছে বোধ হয় !সেখেনে সবাই এমন দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত।
মিনহাজ প্রায় পাড়ে পৌছে গেছে, কিন্তু তিস্তা এক্সপ্রেসের সাথে দৌড়ে পারা যায়? লাফ দেয় সে লাইন থেকে কোনমতে।ব্যাথা পেলেও বেঁচে যায় সে যাত্রায়। আবিষ্কার করে সোহান নেই সাথে। ভয় বেড়ে যায়, হতভম্ব সে। বিকালের সূর্য ঢলে সন্ধ্যা নেমে আসছে। ভেবে কূল পায় না সে কি করবে। নদীর পার ধরে হাটা শুরু করে, অচেনা অজানা জায়গা। নদীতে তাকালেও কিছুই দেখছে না, ভয়ে চোখে পড়ছে না হয়তো। কারোর কাছে বলতেও পারছে না। সামনে একটা ঘাট, গাঁয়ের মেয়ে বধূরা পানি নিচ্ছে আবার কেও ধুচ্ছে কাপড়। যাবে কি যাবে না ভাবতেই এক মেয়ে এমনভাবে তাকালো যেন চিৎকার করে লোক ডাকবে আরেকটু দাঁড়ালেই। তারা তো অবস্থা ঘটনা জানে না।
ভীত এবং কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে সে স্টেশনে ফিরে আসে। গা কাপছে তার। এমনটা আগে হয়নি তার সাথে। রাতে বাড়ি ফিরে সে। কাওকে কিছু বলে না। চুপচাপ নিজের ঘরে যেয়ে শুয়ে পড়ে। মা কিছু জিজ্ঞেস করেননা কারণ তিনি বিরক্ত, রাত করে বাড়ি ফিরে ঢং করছে ধরে নিয়েছিলেন।
পরদিন খোঁজ হয় সোহান নিখোঁজ। বাড়ি ফিরেনি সে কালকে। ফিরবেই কিভাবে?
মিনহাজের আম্মু জিজ্ঞেস করে তাকে,
-কিরে, কি হয়েছে বল !
কিছু বলেনা সে। কিভাবে বলবে গুছিয়ে ঊঠতে পারছে না। স্তব্ধ সে।
-বল কি হয়েছে? চেঁচিয়ে উঠেন মা। কষে দুটো থাপ্পড় লাগান গালে আর ঝারি চলছে
-এতো মানা করি যাস না, যাস না। এখন কথা বলিস না কেন?
প্রতিটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পর একটা চটাস শব্দ হচ্ছিল
-বল?... যাবি আরো?... কথা বলিস না কেন, যাবি আরো আমার কথা ছাড়া?
একসময় বলে সে যে পড়ে গিয়ছে নদীতে যখন রেলব্রীজ পার হচ্ছিল। আরো কয়েকদফা মার পড়ে। জানানো হয় সোহানের পরিবারকে।
শুনে সোহানের মা মূর্ছা যান। তার ছেলে সাঁতার জানে না। বাবা শোনার সাথে সাথে ছোটেন তার শ্যালক, কয়েকজন জেলে সাথে নিয়ে। সেখানেও জেলে পাওয়া যেত আর সেখানের জেলে বরঞ্চ ভাল হতো, কিন্তু বাবার মন !
দিন গড়িয়ে যায়। সকাল দুপুর কখন কেটে যেন বিকেল নামতে থাকে। নানা লোকের নানা মত ছড়াতে থাকে। সোহানের খালা এরিমধ্যে বলে উঠেন
-এই কাজ ওই মিনহাজ-ই করেছে। আমার বাপধনটাকে হিংসা করতো পোলাটা। ওই মেরেছে আমার বাপকে।
এদিকে খালু থামাতে চান খালাকে
-কি যা তা বকছ! থামবে তুমি...
খালার সাথে তাল মিলিয়ে আরো কয়েকজন বলে উঠে
-হ্যাঁ, হ্যাঁ মিনহাজ-ই ধাক্কা দিয়া ফালাইছে। আইসা বলছে পড়ে গেছে...
কয়েকজনের একটা দল মিনহাজের বাড়ির দিকে এগোয়, আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়া হবে। ওদিকে কাউরাইদ থেকে খবর আসে এখনো পাওয়া যায় নি। জনতা আরো ঘি পায় আগুনে।
গেট ভিতর থেকে বন্ধ।
-বেড়িয়ে আয় তুই। বহুত বার বেড়ে গেছে তোর। খুব খেলোয়ার হয়ে গেছিস...
আরেকজন বলে
-আসবি না দরজা ভাঙবো
আরো লোক জড়ো হতে থাকে। গোলমাল বাড়ছে।
হঠাত ভিড়ের মধ্য থেকে আওয়াজ আসে
-তোমরা শুধু শুধুই তাকে দোষছো !
উত্তাল জনতা যখন ই ভাবে মিনহাজের বাড়ির কেও, ভেবে মারতে যাবে সবাই পেছনে ফেরে।
সোহান দাঁড়িয়ে আছে। সেকেন্ডের ব্যাবধানে সবাই নিরব। কাউরাইদ থেকে আবারো ফোন, “পাওয়া যায় নি” আবার একই সাথে খবর যায় শাকিল ফিরে এসেছে ! শুনে মা ছুটে পালিয়ে আসেন।
আনন্দ অবাক সবই হতে হতো সবাইকে। জনতার কথা পালটে যায়।
-আমি বলেছিলাম তারা শুধু দোস্ত না কলিজা একজন আরেকজনের। শুধুই তোরা কত কি বললি?
সবাই তার মুখের দিকে তাকায় একবার। ভুলে যায় কিছুক্ষন আগে সে-ই যে বকেছিল। যাই হোক আনন্দের সময় এখন।
দিন চলে যায়। মিনহাজের দুশ্চিন্তা কমছিল? কমছিল কি?
যদিও দুই বছরের বন্ধুত্ব তার পরও লাখো স্মৃতি দুজনের। পরদিন-ই সোহান মিনহাজের বাসায় । ডেকে নিয়ে চলে সেই গাছটার ছায়ায়, যেখানে তারা রোজ বসে আড্ডায়। দুই দিনের ব্যাবধানে কত কিছু হয়ে যায় জগতে। বসতেই সোহানের প্রথম প্রশ্ন,
-ধাক্কা দিছিলি কেন?
প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন,
-তুই সাঁতার পারিস বলিস নাই কেন?
-তুই কি জানতি ?
-সাঁতার জানস না তুই...
-তাহলে ধাক্কা দিয়েছিলি কেন?
-ওইদিন চার তিনটা হয়েছিল মানলি না কেন?
-ছাতা হয়েছে তিনটা। আবার হাতাহাতি লেগে যায়।
একসময় পকেট থেকে রুমাল পড়ে একটা। হাতে নেয় মিনহাজ,
-এটা কোথা থেকে?
সুন্দর গন্ধ ছিল একটা রুমালে। ছেলেদের না এটা নিশ্চিত।
-বলবো না
-বলবি না আবার মারবো?
-হাহাহা, তোর ভাবির!
-মানে?
ঘটনা খুলে বলা শুরু করে,
স্রোতের সাথে যখন ভাসছি তখন সামনে দেখি একটা ঘাট। একটা রুপসি ঘাটে, হয়তো ঘরের কাজ শেষ করে তখন গা ধুতো!
-তারপর
তারপর আর কি। ডাকলাম নাম কি তোমার?
-বলল নাম?
শোন না বেয়াদব। নাম তো বলেই না উল্টো বলে
-দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো !
-করুন না চিৎকার। আমিও করবো?
-কি চিৎকার করবেন?
-আমি কি দেখেছি!
মেয়ের মুখ তো লাল হয়ে গেল লজ্জায়।
-দেখেছিলি? কি দেখেছিলি?
-ধুর শয়তান ভাউতাবাজি করেছি, হা হা। তারপর পাড়ে উঠে জানলাম এলাকার মেয়ে সে। প্রেম করবে কি না জানতে চাই নি, বলেছি আবার আসবো। সেও বলেছে থাকবে অপেক্ষায়!


পরদিন বিকালে


আবার বেল বাজে সোহানের বাসায়। মাত্রই স্কুল থেকে এসেছে। গেট খুলে সোহান,
-চল যাই
-কোথায়?
-কাউরাইদ...
Shaon 070




মূলগল্পঃ
রাত ১২টা ০৬
২৪এ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
পুনরলিখন ও চলিত ভাষায় সংকলনঃ
বিকাল ০৬ টা ১০
২৪ এ মার্চ, ২০১৯

২টি মন্তব্য:

Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!

© Anari Production 2020. merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.