টাকা চুরি
সবসময় হাসিখুশি থাকা ভদ্রলোকটির আজ মন খারাপ মনে হলো।
-আরে মান্না ভাই যে?
-মৃদুজি কি খবর!
জোর করে হাসার চেষ্টা করলেন বোধ হয় জনাব মান্না। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে কি যেন দেখলেন। বেশ মোটা মানিব্যাগটা। অনেক টাকা সেখানে। বিকাশ রকেটের যুগে পকেটে টাকাই রাখা হয় না অনেকের। তবে জনাব মান্না আজ একটা ক্যাশব্যাক পেয়েছেন। ওয়াল্টনের পন্য কিনে।
-টাকা পেয়ে মন খারাপ করে আছেন যে !
-হা হা হা। না, না। টাকা পেয়ে মন খারাপ হয় কারো ! বাচ্চাটার কি খবর ?
-এইতো হাটা শিখেছে মাত্র। ভাবির শরীর-স্বাস্থ্য কেমন?
-তা আছে আগের মতোই, বেশ।
- সব ঠিক, তবুও মন খারাপ!
একটু সময় নিলেন। একটা নিঃশ্বাস নিলেন বড় করে।
-টাকা হারিয়েছেন কখনো ?
-হ্যাঁ, তা তো হারায় মাঝে মধ্যে টুকটাক।
-কেমন লাগে হারাতে ?
-অবশ্যই ভাল লাগেনা।
শরীর খারাপ কি না জানতে চাইতো মৃদুজি। তার আগেই সাহেব বলে উঠলেন,
-আমার ভালো লাগতো একসময় ...
একটু সময় নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন মান্না
- অবাক হচ্ছেন তাই না ?
অফিসের ক্যাফেটেরিয়াতে কফির মগে একটা চুমুক দিতে যেয়েও দিলেন না। আজ কথাটা বললে বোধ ভাল বোধ করবেন। মৃদুজি অনিচ্ছা অনাগ্রহ সত্যেও মানা করতে পারলেন না। আসলে শুনতেও চাননি, মান্না সাহেব বলা শুরু করেছেন...
তখন আমি নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। নিজের শহরেই। পুরো পরিবার একসাথে। বাবা মা ও ছিলেন একসাথেই। বাসায় তখন কাজের অকাজের অনেক লোক ছিল। কেও ঘর মুছতো, কেও ঝাড়ু দিতো, কেও কাপড় ধুতো। অবশ্য আমার কাপড়গুলো অকাজের একজন ধুয়ে দিতো।
একদিন খেয়াল করলাম আমার টাকা হারানো যাচ্ছে। কিভাবে বুঝতে পারছিলাম না। সেদিন বাজার শেষে পঞ্চাশ টাকার মতো পকেটে ছিল। শার্ট খুলে রাখলাম হ্যাঙ্গারে। পরদিন সেই শার্ট নিয়ে বেরুলাম চা খেতে। রিকসা থেকে নেমে পকেটে হাত দিই, ওমা খালি! কাল ছিলো পঞ্চাশ টাকা স্পষ্ট মনে আছে আমার। প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই সদাইয়ের লিস্টিটা পেলাম। সেখানেও ৪৪০ টাকা বিল, আর দশ টাকা রিকসা ভাড়া লেগেছিল। বিড়ম্বনায় পড়লাম। রিকসা ঘুড়িয়ে আবার বাসায় চললাম। বাসা থেকে টাকা এনে দিয়ে দিলাম।
কিছু একটা ভাল চলছে না বুঝলাম। টাকাটা কাপড় ধৌতকারীর কাছেই যায় বুঝলাম।
কিছুদিন যাবত খেয়াল করছি বাড়িতে টুকটাক শৌখিন জিনিস আনছেন গিন্নী। ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো আরো দুইদিন পর।
-শুনছেন? মৃদুজিকে জিজ্ঞেস করলেন মান্না
-জ্বি জ্বি, তারপর?
আবার বলতে শুরু করলেন...
অফিস শেষে ঘরে ঢুকতেই
-হ্যাপি বার্থডে বাবা !
হঠাত করেই কোথায় লুকিয়ে থাকা সবাই সামনে এসে হাজির। আমি অবাক হবো না হতবাক বুঝলাম না। এসবের সাথে বউয়ের আতাত ছিল বুঝলাম।আজো চোখের সামনে ভেসে রয়েছে সেই দিনটা।
-ও তাহলে ভাবি সাহেব কাপড় ধুতো? হা হা হা...
- হা হা হা, জ্বি না। হ্যাপি বার্থডে বলা পিচ্চিটা। সবার আদরে থাকা শিশুটা।
আমি বুঝতাম সে টাকা নিচ্ছে। কখনো মানা করিনি। তার কাছ থেকে আমি বাবাকে ভালোবাসা শিখেছি যে ! টাকাটা নিয়েই ইভার (আমার স্ত্রী) হাতে দিয়ে দিত। কারোর জন্য উপহার, মাঝে মাঝে ছোট্ট একটা মাটির ব্যাংক এসব বায়না করে কিনত টাকা দিয়ে। কি আজব ব্যাপার তাইনা? নিজের টাকা হারাতে ভালো লাগতো !
মৃদুজি কখনো এমনভাবে বলতে শুনে নি উনাকে। দ্বিতীয় বিয়ে করে হওয়া ছেলেটা অবশ্য বেশ আদুরেই। সুর মিলিয়ে বলতে লাগলেন,
-তা আপনার ছেলেটা মাশা-আল্লাহ।
-হুম। ধন্যবাদ। আমার মেয়েটা আরো বেশি আদুরে ছিল।
-কিছু মনে করবেন না, প্রথম স্ত্রীর সন্তান?
-জ্বি।
-আমি অবশ্য জানতে চাচ্ছিলাম অনেকদিন। পাছে আপনি কি মনে করেন ভেবে বলিনি। আজ যখন বলেই ফেললাম আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি।
-প্রথম স্ত্রী কোথায়,কেমন ছিলেন?
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন মান্না সাহেব।
-অনেক আদুরে ছিল, নাহলে মৌরির মতো অমন আদুরে মেয়ে হয় কোথুকে?
একটু সময় নিলেন,
মেয়েটার প্রথম যেদিন স্কুল ছিল সেদিনকার কথা। রিকসা করে বাসায় ফিরছিল। উপরওয়ালার ও আদুরে মানুষ পছন্দ, রিকসা থেকেই ডেকে নিলেন হয়তো তাই। বাস এসে চলে গেল রিক্সা পিষে।
নিজেকে সামলে নিলেন মান্না। জানেন যখন এক্সিডেন্টের খবর শুনে যখন যাই স্কুলের সামনে, তার হাতে একটা ডায়েরী ছিল ছোট। উপরে লেখা আব্বু তোমার জন্য। আমার বউ লিখে দিয়েছিল হয়তো। অবশ্য তার নিচে একটা ছোট্ট হাতের ছাপ পড়েছিল সেদিন । লাল ছাপ, ওটা পিচ্চিটার ই ছিল। আমি না, ফরেনসিক বলেছে।
মৃদুজি সামলে নিতে চাইলেন, দ্রুত বেসিনের দিকে ছুটলেন। বেসিনটা অনেকে দূরে সরে গিয়ছিল বোধ হয়।ফরমাল ইউনিফর্মটা সামলে নিলেও চোখের পানিটা সামলে নিতে পারেন নি।
Shaon 070
#নিরাপদ_সড়ক_চাই 5:41PM
23/03/2019
-আরে মান্না ভাই যে?
-মৃদুজি কি খবর!
জোর করে হাসার চেষ্টা করলেন বোধ হয় জনাব মান্না। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে কি যেন দেখলেন। বেশ মোটা মানিব্যাগটা। অনেক টাকা সেখানে। বিকাশ রকেটের যুগে পকেটে টাকাই রাখা হয় না অনেকের। তবে জনাব মান্না আজ একটা ক্যাশব্যাক পেয়েছেন। ওয়াল্টনের পন্য কিনে।
-টাকা পেয়ে মন খারাপ করে আছেন যে !
-হা হা হা। না, না। টাকা পেয়ে মন খারাপ হয় কারো ! বাচ্চাটার কি খবর ?
-এইতো হাটা শিখেছে মাত্র। ভাবির শরীর-স্বাস্থ্য কেমন?
-তা আছে আগের মতোই, বেশ।
- সব ঠিক, তবুও মন খারাপ!
একটু সময় নিলেন। একটা নিঃশ্বাস নিলেন বড় করে।
-টাকা হারিয়েছেন কখনো ?
-হ্যাঁ, তা তো হারায় মাঝে মধ্যে টুকটাক।
-কেমন লাগে হারাতে ?
-অবশ্যই ভাল লাগেনা।
শরীর খারাপ কি না জানতে চাইতো মৃদুজি। তার আগেই সাহেব বলে উঠলেন,
-আমার ভালো লাগতো একসময় ...
একটু সময় নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন মান্না
- অবাক হচ্ছেন তাই না ?
অফিসের ক্যাফেটেরিয়াতে কফির মগে একটা চুমুক দিতে যেয়েও দিলেন না। আজ কথাটা বললে বোধ ভাল বোধ করবেন। মৃদুজি অনিচ্ছা অনাগ্রহ সত্যেও মানা করতে পারলেন না। আসলে শুনতেও চাননি, মান্না সাহেব বলা শুরু করেছেন...
তখন আমি নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। নিজের শহরেই। পুরো পরিবার একসাথে। বাবা মা ও ছিলেন একসাথেই। বাসায় তখন কাজের অকাজের অনেক লোক ছিল। কেও ঘর মুছতো, কেও ঝাড়ু দিতো, কেও কাপড় ধুতো। অবশ্য আমার কাপড়গুলো অকাজের একজন ধুয়ে দিতো।
একদিন খেয়াল করলাম আমার টাকা হারানো যাচ্ছে। কিভাবে বুঝতে পারছিলাম না। সেদিন বাজার শেষে পঞ্চাশ টাকার মতো পকেটে ছিল। শার্ট খুলে রাখলাম হ্যাঙ্গারে। পরদিন সেই শার্ট নিয়ে বেরুলাম চা খেতে। রিকসা থেকে নেমে পকেটে হাত দিই, ওমা খালি! কাল ছিলো পঞ্চাশ টাকা স্পষ্ট মনে আছে আমার। প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই সদাইয়ের লিস্টিটা পেলাম। সেখানেও ৪৪০ টাকা বিল, আর দশ টাকা রিকসা ভাড়া লেগেছিল। বিড়ম্বনায় পড়লাম। রিকসা ঘুড়িয়ে আবার বাসায় চললাম। বাসা থেকে টাকা এনে দিয়ে দিলাম।
কিছু একটা ভাল চলছে না বুঝলাম। টাকাটা কাপড় ধৌতকারীর কাছেই যায় বুঝলাম।
কিছুদিন যাবত খেয়াল করছি বাড়িতে টুকটাক শৌখিন জিনিস আনছেন গিন্নী। ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো আরো দুইদিন পর।
-শুনছেন? মৃদুজিকে জিজ্ঞেস করলেন মান্না
-জ্বি জ্বি, তারপর?
আবার বলতে শুরু করলেন...
অফিস শেষে ঘরে ঢুকতেই
-হ্যাপি বার্থডে বাবা !
হঠাত করেই কোথায় লুকিয়ে থাকা সবাই সামনে এসে হাজির। আমি অবাক হবো না হতবাক বুঝলাম না। এসবের সাথে বউয়ের আতাত ছিল বুঝলাম।আজো চোখের সামনে ভেসে রয়েছে সেই দিনটা।
-ও তাহলে ভাবি সাহেব কাপড় ধুতো? হা হা হা...
- হা হা হা, জ্বি না। হ্যাপি বার্থডে বলা পিচ্চিটা। সবার আদরে থাকা শিশুটা।
আমি বুঝতাম সে টাকা নিচ্ছে। কখনো মানা করিনি। তার কাছ থেকে আমি বাবাকে ভালোবাসা শিখেছি যে ! টাকাটা নিয়েই ইভার (আমার স্ত্রী) হাতে দিয়ে দিত। কারোর জন্য উপহার, মাঝে মাঝে ছোট্ট একটা মাটির ব্যাংক এসব বায়না করে কিনত টাকা দিয়ে। কি আজব ব্যাপার তাইনা? নিজের টাকা হারাতে ভালো লাগতো !
মৃদুজি কখনো এমনভাবে বলতে শুনে নি উনাকে। দ্বিতীয় বিয়ে করে হওয়া ছেলেটা অবশ্য বেশ আদুরেই। সুর মিলিয়ে বলতে লাগলেন,
-তা আপনার ছেলেটা মাশা-আল্লাহ।
-হুম। ধন্যবাদ। আমার মেয়েটা আরো বেশি আদুরে ছিল।
-কিছু মনে করবেন না, প্রথম স্ত্রীর সন্তান?
-জ্বি।
-আমি অবশ্য জানতে চাচ্ছিলাম অনেকদিন। পাছে আপনি কি মনে করেন ভেবে বলিনি। আজ যখন বলেই ফেললাম আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি।
-প্রথম স্ত্রী কোথায়,কেমন ছিলেন?
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন মান্না সাহেব।
-অনেক আদুরে ছিল, নাহলে মৌরির মতো অমন আদুরে মেয়ে হয় কোথুকে?
একটু সময় নিলেন,
মেয়েটার প্রথম যেদিন স্কুল ছিল সেদিনকার কথা। রিকসা করে বাসায় ফিরছিল। উপরওয়ালার ও আদুরে মানুষ পছন্দ, রিকসা থেকেই ডেকে নিলেন হয়তো তাই। বাস এসে চলে গেল রিক্সা পিষে।
নিজেকে সামলে নিলেন মান্না। জানেন যখন এক্সিডেন্টের খবর শুনে যখন যাই স্কুলের সামনে, তার হাতে একটা ডায়েরী ছিল ছোট। উপরে লেখা আব্বু তোমার জন্য। আমার বউ লিখে দিয়েছিল হয়তো। অবশ্য তার নিচে একটা ছোট্ট হাতের ছাপ পড়েছিল সেদিন । লাল ছাপ, ওটা পিচ্চিটার ই ছিল। আমি না, ফরেনসিক বলেছে।
মৃদুজি সামলে নিতে চাইলেন, দ্রুত বেসিনের দিকে ছুটলেন। বেসিনটা অনেকে দূরে সরে গিয়ছিল বোধ হয়।ফরমাল ইউনিফর্মটা সামলে নিলেও চোখের পানিটা সামলে নিতে পারেন নি।
Shaon 070
#নিরাপদ_সড়ক_চাই 5:41PM
23/03/2019
কোন মন্তব্য নেই
Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!