Header Ads

Bodrul-Islam-bodrul-070-bodrul070-bodrul-070-tutorial

স্মৃতিচারনঃ 1 to 99

অনেক দিন পর স্টোররুমে ঢুকলাম। স্মৃতি খুঁজতে। অনেক সময় ফেলনা জিনিসে আনন্দময় স্মৃতি পাওয়া যায়। কিছু আবার মনে করিয়ে দেয় কোন অপরিপক্বতা। কত বোকা ছিলাম ?এই যেমন কালো ফ্রেমওয়ালা আয়নাটা। জন্মদিনে পেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত প্রথম জন্মদিনে। বাবর বলেছিল,

-এটা আমার দাদুর দেয়া। দাদু বলেছে এতে নাকি রাতে ভূত দেখা যেত।



অনুভূতি প্রকাশে বাবরের তুলনা ছিলনা। নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বাজে ছিল ! এমন অপক্ব পরিবেশনায় সবাই হেসেছিল। আমিও হেসেছিলাম আর সেও হেসেছিল। ও হ্যা তার কথা তো বলাই হয় নি। ক্যাম্পাসের স্পন্দন আমার মনে থাকা একজন ছিল সে সময়। তার সামনে গেলেই কেমন যেন হয়ে যেতাম। কি বলব না বলব মাথায় খেলতো না।

আয়নার ঘটনাই বলি না, আয়নাটা পুরনো ছিল। আমি ভাবছিলাম সত্যিই যদি ভূত দেখা যায়! সেদিন রাতে তাই আয়না নিয়ে বসলাম, সবাই ঘুমানোর পর।জন্মদিনের কেকটা হাতে ছিল। তাকিয়ে আছি একনজরে। চোখ ঘুমে টলছিল। আমিও ঢুলছিলাম।



কিছুক্ষন পর এক বিড়ালের কান্নায় ঘুম ভাঙল। হাতে আয়না তখনো, চারদিক ঘোলাটে অন্ধকার। আয়নার দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চরক গাছ। “আরে আরে, ভুউউত... ভুউউত... “ বলে চেঁচিয়ে উঠলাম । সবাই দৌড়ে আসে, “আরে হলো কি, হলো কি!”। আমি ট্রমায় আছি তখনো। মানবসমাজের চেয়ে ভূতসমাজে তখন আমার বিশ্বাস চরমে। অন্য কেও আয়নায় ভূত দেখে না। কিছুক্ষনের মাথায় ছোটবোন মুমু চেঁচিয়ে উঠে “ভূত” বলে। তবে আয়নায় না, আমার দিকে তাকিয়ে। এদিকে পোষা বেড়ালটা ততক্ষনে আমার গাল চেটে কেকের স্বাদ নিচ্ছিল। আমি লজ্জায় পড়লেও যুক্তি দাড় করাতে ভুলি নি,

“আমার দেখা ভূতটা অতিকায় ছিল, বিশাল তার চেহারা...”

কথা শেষ না হতেই ভাইয়া টেনে নিয়ে বড় আয়নার সামনে দাড় করিয়ে দিল আমাকে।

যাইহোক বগুড়ার সেই মেয়েকে আমি কেন যেন বলে দিলাম ভুতকাহিনি। ভেবেছিলাম ও আর কাকে বলবে ? ভুল ভাঙ্গে পরদিন ক্লাসে ঢুকার সময়। লেট ছিলাম। সেদিন নাকি ক্লাসে গল্প করেছেন স্যার। আমি ক্লাসে ঢুকব,

-আসবো স্যার...

কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই সবাই ডেকে উঠলো

-আয়না সোহাগ। আয়না...

স্যারও হেসে উঠে। আমি বুঝে উঠার আগেই স্যার ডাকে

-আয়না... দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

ক্লাস তখন ফেটে পড়েছে অট্টহাসিতে। এমন কিছু ঘটনার পরও তার প্রেমের ভূত মাথা থেকে যায় না। যখনি দেখা হয় আমি যথারীতি খেই হারিয়ে ফেলি। হ্যা এমন হতো।

চোখের সামনে একটা শো-পিস ডাকছিল স্টোররুমের কোনায় থেকে। দেখে আমি ইতস্তত বোধ করলাম। এখনো ভাবি আমি কিভাবে করেছিলাম কাজটা! এটা ওই মেয়ের থেকে পাওয়া। লজ্জাজনক হলেও সত্য মেয়েটা দেয় নি। আমিই নিয়েছিলাম তার কাছ থেকে।

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। সবাই শহরে ঘুরতে বেরুলাম। এর মধ্যে মেয়েটা একটা গিফট নিয়ে এসেছিল। ১ টু ৯৯ এর স্টোর থেকে। “আই লাভ ইউ, লাভ ডিয়ার...” সহ কয়েকটা ভালুকের জোড়ার ছবি ছিল। রঙটা ছিল আমার সবচেয়ে অপছন্দের, গোলাপি রঙ। কিন্তু গোলাপি রঙয়ের গিফটটা দুধে আলতা মেয়েটার হাতে খুব সুন্দর লাগছিল। জানতে চেয়েছিলাম কেন কিনেছে, বলে এমনি।

-তাহলে আমাকে দিয়ে দে!

ঠাট্টায় মজায় দিয়ে দেয় আমাকে। সেদিন কি হয়েছিল কে জানে, আমি আর দিই নি ফেরত। হয়তো তার কোন বান্ধবীর জন্মদিনের উপহার ছিল। সবাই হতভম্ব ছিল, আমি বুঝি নি। এখনো মনে পড়লেই হাসি। শো-পিসটা হাতে নিয়ে ডাইনিংয়ের দিকে এগোলাম। কলিংবেলের শব্দ রোমান্টিক মুডটাই বিগড়ে দিল। বউ দরজা খুলে দিল,

-সোহাগ...

বলেই আমার হাতের দিকে তাকালো মেহমান। আমি আবারো নির্বাক। হাতে গোলাপি শো-পিস সামনে সেই দুধে আলতা মেয়েটা। ১৫ বছর হয়ে গেছে। হাতের জিনিসটার রঙ উঠে গেছে, মুছে গেছে লাভ লেখার পাশে ডিয়ার লেখাটা। আহ ধুর কি ভাবছি আমি, ডিয়ারটা মুছে গেছে বলছি কেন! ডিয়ারটা তো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কেবল!




#Shaon_070

বিকাল ০৪ঃ১০

১২/০৩/২০১৯

কোন মন্তব্য নেই

Every comment will be moderated to prevent spamming. Don't put any spam link, Please!

© Anari Production 2020. merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.